আমি ও আমার স্ত্রী শেষ পর্যন্ত আমাদের নতুন বাসাটা বুঝে পেলাম। আমি দোষী দোষী চেহারা নিয়ে তার দিকে তাকাতেই মিলি হেসে ফেলল। আমি মনে মনে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললাম, কারণ আমার নতুন চাকরীর জন্য নিজেদের এতদিনের ঘর বাড়ি ছেড়েছুড়ে এতো দূরে চলে আসাটা - বিশেষ করে এখানে - এটা আসলে ও কখনোই মন থেকে মেনে নিতে পারে নি। সত্যি কথা বলতে আমি নিজেও খুব একটা নিশ্চিত নই এতটা ভিন্ন পরিবেশের সাথে নিজেকে
মানিয়ে নিতে পারবো কিনা। এতসব সাতপাঁচ যখন ভাবছিলাম তখন খেয়ালই করিনি কখন একজন মাঝবয়সী ভদ্রলোক আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। আমি তাকে লক্ষ্য করতেই তিনি আমার দিকে হাসিমুখে হাত বাড়িয়ে দিলেন " তো, আপনি তাহলে আমাদের নতুন প্রতিবেশী?" তিনি বললেন। আমি মাথা নেড়ে আমার আর আমার স্ত্রীর পরিচয় দিয়ে বললাম "আসলে কিছু না ভেবেই নতুন জায়গার লোভে চলে এসেছি। জানি না টিকতে পারবো কিনা।"
তিনিতো মহা অবাক হলেন " আরে বলেন কি, সবাই এখানে এসে প্রথম প্রথম তাই বলে। এই যে আমাকেই দেখুন না, আমি ছিলাম এক গ্রামের শিক্ষক যে কিনা গ্রামের মাটি ছাড়া জীবনের ত্রিশটি বছর অন্য কোন জায়গায় পা রাখে নি। অথচ এই মার্চে আমার এখানে আসার দশ বছর পুর্তি হচ্ছে। "
"তাই নাকি ?" আমি বেশ অবাক হলাম "তাহলে তো আপনি এখাকার পুরনো বাসিন্দা। আপনি আমাদের এখানকার চলনবলন ধরিয়ে দিতে পারবেন।"
তিনি হাত নেড়ে ব্যাপারটা যেন উড়িয়ে দিলেন "আরে সবাই এখানে আসাটাকে অনেক বড় করে দেখে আসলে তেমন একটা পার্থক্য নেই অন্যান্য যেকোন জায়গা থেকে।"
"বাচ্চারা মনে হয় একটু বড় " আমি স্কুলগামী একদল বাচ্চার দিকে তাকিয়ে বললাম, তারা এখনি প্রায় পাঁচ ফুট, যদিও দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে এরা আট নয়টার বেশি বসন্ত দেখেনি।
"ও কিছু না। আসলে জায়গাটা একটু -" বলে তিনি চোখ টিপলেন "বেশি উঁচুতেতো।"
আমি হাসলাম কৌতুকটা ধরতে পেরে।
"হ্যা দিন রাতের দৈর্ঘ্য নিয়ে কিছুটা সমস্যা হতে পারে। তবে সেটা তো খুব সমস্যার কথা না তাই না?" তিনি বললেন। তারপর ঘড়ি দেখে আঁতকে উঠলেন "দেখুনতো, কত দেরী করে ফেলেছি। যাই হোক ঐ ওটা হল আমার বাড়ি। গোছগাছ শেষ করে অবশ্যই চলে আসবেন আর আমার স্ত্রীর হাতের রান্না পরখ করে দেখবেন।" আমি হাসলাম।
ঘর সাজাতে আমাদের আরো ঘন্টা তিনেক লাগল যদিও বেশি জিনিসপত্র আনি নি তবুও চলাফেরায় কিছুটা অসুবিধা হচ্ছিল। আমার স্ত্রী আমাকে দেখে হাসল। আমিও লাফ দিয়ে টেবিল পার হয়ে তাকে দেখালাম "মনে হয় মানিয়ে নেওয়া যাবে কি বল?"
আমার স্ত্রী কিছু না বলে বাইরে বেরিয়ে গেল। আমি তার পিছু পিছু গেলাম। রাত হয়ে এসেছে। জ্যোৎস্নায় ঝলমল করছে চারদিক।
"কি সুন্দর রাত।" আমার স্ত্রী বলল "ঠিক ঘরের মতন।"
"হুম" আমি অন্যমনস্কভাবে সায় দিলাম। কিন্তু সত্যি কথাটা হল রাত সুন্দর হলেও মোটেও ঘরের মতন নয়। আকাশে তারার সংখ্যা অতিরিক্ত বেশি। আর এত সুন্দর জ্যোৎস্নার আলো সেই চিরাচরিত রূপালী গোলক থেকে বিচ্ছুরিত হচ্ছে না। বরং আকাশে আছে আরো সুন্দর একটা গোলক, নীল আর সবুজ রঙে ঢাকা, অপূর্ব সুন্দর।
গোলকটা পৃথিবী।
কে জানে চাঁদে নতুন জীবনটা হয়তো ভালোই কাটবে।
আমি ও আমার স্ত্রী শেষ পর্যন্ত আমাদের নতুন বাসাটা বুঝে পেলাম। আমি দোষী দোষী চেহারা নিয়ে তার দিকে তাকাতেই মিলি হেসে ফেলল। আমি মনে মনে স্বস্তির...
নতুন বাসা
About author: Fuad Naser
Cress arugula peanut tigernut wattle seed kombu parsnip. Lotus root mung bean arugula tigernut horseradish endive yarrow gourd. Radicchio cress avocado garlic quandong collard greens.
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):