আমার কাছে যদি কেউ এই চলচ্চিত্রটি সম্পর্কে জানতে চায় তবে আমি বলি, এটি চলচ্চিত্র নয় – এটি আড়াই ঘন্টার একটা কবিতা, আড়াই ঘন্টার একটি অপূর্ব ল্যা...

ইনটু দা ওয়াইল্ড


আমার কাছে যদি কেউ এই চলচ্চিত্রটি সম্পর্কে জানতে চায় তবে আমি বলি, এটি চলচ্চিত্র নয় – এটি আড়াই ঘন্টার একটা কবিতা, আড়াই ঘন্টার একটি অপূর্ব ল্যান্ডস্কেপ, মোহনীয় সূরমুর্ছনা আড়াই ঘন্টা ব্যাপী - এক বিদ্রোহী, সংসারত্যাগী তরুণের জীবনের জীবনের শিল্পরূপ এই চলচ্চিত্রটি





, শন পেনের “ইনটু দা ওয়াইল্ড”। ছবিটি শুরু হয় লর্ড বায়রনের একটি কবিতা দিয়ে “There is a pleasure in the pathless words. ... There is society where none intrudes. ... ” পুরো ছবিতে এডি ভেডারের অপূর্ব, অমর কিছু সঙ্গীত আর যুক্তরাষ্ট্রের কান্ট্রিসাইডের চোখধাঁধানো ল্যান্ডস্কেপ – সব মিলিয়ে ১৫০ মিনিটের একটি বিস্ময়কর যাত্রার কাহিনী। জন ক্রাকাওয়ের বেস্ট সেলার উপন্যাস অবলম্বনে ক্রিস ম্যাকক্যান্ডলস নামে এক তরুণের নিরুদ্দেশের দিকে যাত্রার বাস্তব কাহিনী সেলুলয়েডের পরতে পরতে এঁকে গেছেন পরিচালক। সকল ধনসম্পদ, পরিবার-প্রিয়জন, শিক্ষা-জ্ঞান সব ত্যাগ করে পায়ে হেঁটে আলাস্কার দিকে যাত্রা শুরু করে ক্রিস ম্যাকক্যান্ডলস নামের এক যুবক। স্বার্থহীনতাও যে কত স্বার্থপর হতে পারে, সন্যাসধর্ম আসলে কি, এ ধরনের কোন কঠিন দার্শনিক প্রশ্নের জবাব খুঁজে বের করা তার লক্ষ্য ছিল না, সে দায়িত্ব দর্শকের। সে শুধু ভেতরের তাগিদে সবকিছু ছেড়েছুড়ে পা বাড়িয়েছিল সামনের দিকে - পথে পড়েছে নানা বাধা বিপত্তি - কখনো ঝড়-তুফান, কখনো ক্ষুধা, কখনো অনতিক্রম্য নদী-পাহাড় আবার কখনো বা বর্বর মানুষ। কিন্তু তবুও সে এগিয়ে গেছে সামনে। পথে দেখা হয়েছে চমৎকার কিছু পৃথিবীবাসীর সাথে, তারা ক্রিসের স্বচ্ছ মনের আকর্ষণে এগিয়ে এসেছেন, বাড়িয়ে দিয়েছেন স্নেহের হাত – কিন্তু সব মায়ার বাঁধন ত্যাগ করে এগিয়ে গিয়েছে ক্রিস। রসদ শেষ হয়, পয়সা কড়ি হারিয়ে যায় কিন্তু পথ শেষ হয় না। মাঝে মাঝে মনে পড়ে ঘরের ঊষ্ণ কোণটি, প্রিয় ছোট বোন, মা-বাবার কথা। তাও সে এগিয়ে চলে সামনের দিকে। কেউ যদি এই চলচ্চিত্র থেকে কিছু শিখতে চান তবে শিখতে পারেন, আর বাকিরা আমার মতো শুধু এই সমাজ আর জীবনের প্রতি বিদ্রোহকারী তরুণটিকেই দেখতে থাকুন আর উপভোগ করুন সর্বকালের সবচেয়ে সেরা রোড ফিল্মগুলোর একটি - ইনটু দা ওয়াইল্ড।

0 মন্তব্য(গুলি):