ব্যস্ত শহরের একটি ব্যস্ত রাস্তা। তাতে ছুটে চলছে আরো ব্যস্ত লোকজন। কারো সময় নেই কারো দিকে তাকানোর। মাথার ওপরের চৈত্রের গনগনে রোদ্দুর অফিসগামী...
অদ্ভুত ছেলেটি
ব্যস্ত শহরের একটি ব্যস্ত রাস্তা। তাতে ছুটে চলছে আরো ব্যস্ত লোকজন। কারো সময় নেই কারো দিকে তাকানোর। মাথার ওপরের চৈত্রের গনগনে রোদ্দুর অফিসগামী মানুষদের পিঠে জ্বালা ধরাচ্ছে বসের ঝাঁঝ ধরানো অপমানের মতো। বিশাল অজগরের মতো রাস্তাটিতে মানুষজন আর গাড়িঘোড়া ছুটে চলেছে আপন ছন্দে, স্থির গতিতে।
শুধু ছেলেটি দাঁড়িয়ে আছে ঠিক রাস্তার মাঝখানে।
বার তের বছর বয়স, শ্যামলা একহারা গড়ন। পেটটা যেন অপুষ্টিতেই একটু ফোলা। সবদিক থেকেই ঢাকার রাস্তার যেকোন স্বাভাবিক চরিত্র। কিন্তু কেবল তার চোখদুটোর মধ্যেই যেন রাজ্যের মায়া এসে জড়ো হয়েছে। বড় বড় কাজলকালো চোখদুটো এখন কি দেখছে কে জানে। কোনদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই, আশপাশ দিয়ে শাঁ শাঁ করে গাড়ি ছূটে যাচ্ছে – পুলসিরাত পার হওয়ার মতো ঝুকিঁ নিয়ে রাস্তা পার হচ্ছে লোকজন। কেউই ছেলেটিকে খেয়াল করছে না, খেয়াল করলেও একটি মুহূর্তের জন্যই হয়তোবা - এমন কোন অপরূপ দৃশ্য নয় যার জন্য রাস্তা পার হওয়ার অমূল্য সুযোগটা হারাতে হবে। তবে আশেপাশের কোন কিছুই বিন্দুমাত্র স্পর্শ করছে না ছেলেটিকে, সে একঠারে দাঁড়িয়ে রয়েছে রাস্তার মাঝে।
হঠাৎই যমদূতের মতো ছূটে এল একটি ট্রাক তার দিকে, তাও ছেলেটির কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। গতকাল রাতে ড্রাইভারের কোন ট্রিপ ছিল না বলেই বোধহয় সে তখন পর্যন্ত সজাগ ছিল, রাস্তার ওপরে ছেলেটিকে দেখে অনভ্যাসে একটু দেরী করেই ব্রেক করল। ব্রেক করবার পরও বিকট শব্দে আজরাইলের যান্ত্রিক ভার্সনের মতো ট্রাকটি টায়ার পুড়িয়ে এগিয়ে আসতে লাগল ছেলেটি দিকে। শব্দের কারণেই হয়তো ছেলেটা কিছুটা সম্বিৎ ফিরে পেল। তবে একটুও নড়ল না, বরঞ্চ অবাক বিস্ময়ে ধেয়ে আসা মৃত্যুর চেহারা দেখতে লাগল। ঠিক সময়ে একটা বলিষ্ঠ হাত টান মেরে তাকে ট্রাকের গতিপথ থেকে সরিয়ে দিল, ছেলেটি এবং তার রক্ষাকর্তা যুবকটি হুমড়ি খেয়ে রাস্তার ওপর পড়ে গেল। আর ট্রাকটি গিয়ে থামল ঠিক একটু আগে যেখানে ছেলেটি দাড়িয়ে ছিল সেইখানটায়।
মোড়ে দাঁড়ানো ট্রাফিক পুলিশ ছুটে এলেন ট্রাকের দিকে। ট্রাকের দরজা খুলে মুশকো চেহারার ড্রাইভারকে টেনে নামিয়েই ধাম ধাম করে তার ট্রাকের ওজনের সমানই দুটো চড় কষালেন। ট্রাক ড্রাইভার হয়ে জন্ম হয়েছে যেহেতু এসব মার ধর্তব্যের মাঝে না ধরলেও চলে, তাই সে তাড়াতাড়ি নরম সুরে ব্যাখ্যা করতে লাগল যে দোষটা আসলে তার নয়, এবং সেই সাথে আইনের রক্ষাকর্তার সেলামিটাও তার হাতে গুজেঁ দিতে মোটেও ভূল করল না, অমন কাঁচা কাজ করবার মতো লোকই নয় সে। কিন্তু তবুও ট্রাফিক ব্যাটার রাগ পড়ে না। টাকা পকেটে গুজেও আরেকটা সিএনজি সাইজের চড় কষিয়ে গালি দিতে দিতে ট্রাক ড্রাইভারকে বিদায় করল। ওদিকে আবার আরেক ঝামেলা, রাস্তার মাঝে ছেলেটিকে ঘিরে ভীড় জমে গেছে। ছেলেটি এখনো রাস্তায় বসে, তার শ্রুশুষা করছেন মাঝবয়সী একজন মহিলা আর রক্ষাকর্তা যুবকটি। আর আশেপাশের সবাই তামাশা দেখছে আর দূর থেকে নানারকম উপদেশ বর্ষাচ্ছে। বাঙালী জাতিকে মনে মনে কয়েকটা কুৎসিত গালি দিয়ে ট্রাফিক সার্জেন্ট লাঠি নিয়ে তেড়ে গেলেন ভীড়ের দিকে,
“হ্যাঃ এখানে হচ্ছেটা কি? নাটক দেখতে আসছেন সবাই অ্যাঃ ? ” কর্কশ স্বরে রুক্ষভাষায় শব্দগুলি উচ্চারণ করামাত্রই ভীড় ফাঁকা হয়ে গেল, হাজার হলেও পুলিশের ভয় বাঙালী জাতির ডিএনএতে খোদা খোদাই করে লিখে রেখেছেন। এখন রাস্তায় শুধু আছে সেবাদানকারী মহিলা, আজকের সুপারহিরো শান্তিনিকেতনী চেহারার যুবক – আর অদ্ভূত সেই ছেলেটি।
পুলিশ মহাশয় এবার গিয়ে ছেলেটির ওপর চড়াও হলেন,
“আকাশের দিকে তাকায়ে হাঁটলে পরে তুমার লাশ কি আমি কান্ধে কইরা লয়া যামু অ্যা? তুমাদের মতো পোলাপাইনরে বাসায় নিয়ম কইরা দুইবেলা প্যাঁদানো উচিত নয়তো তুমাদের ঘাঁড় সোজা হইবো না হুঃ!” এরকম বিরাশি সিক্কার ধমক শুনে রক্ষাকর্তা যুবক আর উপকারী মহিলা পর্যন্ত ভড়কে গেলেন তবে ছেলেটির মুখে কোনরকম অভিব্যক্তির চিহ্ন দেখা গেল না। মহিলাটি দ্রুত সামলে নিয়ে বললেন, “আহা ওকে বকছেন কেন? ট্রাক ড্রাইভাররা কিভাবে গাড়ি চালায় সেটাতো আপনাদের থেকে ভালো কেউ জানে না।” যুবকটিও বিড়বিড় করে দায়িত্বের অবহেলা ... টাইপ কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু ট্রাফিকের রক্তচক্ষু দেখে নিরস্ত হল। মহিলা ইতোমধ্যে ছেলেটার পায়ের ছড়ে যাওয়া পায়ে ব্যান্ডেজ করে দিয়েছেন। যুবকটি হাত ধরে ছেলেটিকে উঠাতে গেলে ছেলেটি ছিটকে সরে গিয়ে দুর্বল পায়ে নিজেই উঠে দাঁড়াল। তারপর কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে হাঁটতে লাগল। মহিলা, পুলিশ আর যুবকটি অবাকচোখে কিছুক্ষণ ছেলেটির চলে যাওয়া দেখল, তারপর তারা নিজেরা নিজ নিজ পথে হাঁটা ধরল।
ট্রাফিক সার্জেন্ট মোকাররম হোসেন ট্রাফিক আইল্যান্ডে ফেরত যেতে যেতে আবার অদ্ভুত ছেলেটির দিকে তাকালেন। ছেলেটির সাথে তার নিজের সন্তান রুবেলের কি অদ্ভুত মিল! ধূর, কিসব যা তা ভাবছেন তিনি। রুবেলকে শেষ যখন তিনি দেখেছিলেন নয় বছর আগে তখন তার বয়স ছিল তিন কি চার, তবে এতদিনে সে নিশ্চয়ই এই ছেলেটির বয়সীই হয়েছে। মোকাররম মনে মনে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন, কোন দোষ ছিল না তবুও নিরীহ ট্রাক ড্রাইভারটাকে পেটালেন, তাঁর এই বদমেজাজই তার কাল হল। তাঁর স্ত্রী মিলি তাকে ছেড়ে চলে গেল তাঁর এই বদমেজাজের কারণে। অথচ তিনি একবারও মিলির গায়ে হাত তোলেন নি, এমনকি রাগ হয়েও কথা বলেন নি। বলবেনই বা কিভাবে, তিনি নিজের জানের চেয়েও বেশি ভালবাসতেন নিজের স্ত্রী আর সন্তানকে। কিন্তু সেই যে একবার মিলিকে নিয়ে বেড়াতে বের হবার পর এক ছিনতাইকারীর হাতে পড়লেন, ডিউটি রিভলবার বের করবার সাথে সাথেই বেচারা ভয়ে কেঁচো হয়ে যায়, দৌড় দেবার কথাটাও ভূলে যায়। দিনটা মাটি করবার জন্য মোকাররম সেদিন ছোকরাটাকে ভয়াবহ মার দিয়েছিলেন, নৃশংস মার, মোকাররমের শরীরের ভেতরের জানোয়ারটা সেদিন বের হয়ে পড়েছিল মিলির সামনে। ভয়ে আতংকে মিলি সেদিনই রুবেলকে নিয়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়ে। আত্মসম্মানের খাতিরে প্রথম প্রথম তিনি খোঁজ করেন নি। আর পরে মান সম্মান ছুড়েঁ ফেলে যখন হন্যে হয়ে খুজতে নামেন তখন আর হদিশ পান নি তার স্ত্রী সন্তানের। বিশাল শহর এ দুজনকে গ্রাস করে নিয়েছে। কে জানে মিলি আর রুবেল কেমন আছে এখন, কে জানে এই ছেলেটিই রুবেল কিনা। রুবেলকে এখন দেখলে কি তিনি চিনবেন? ছেলেটির দিকে আবারো মোকাররম তাকিয়ে খূব সন্তর্পণে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন।
নাজমা পারভীনের ক্লাস শুরু হতে আর খুব বেশিক্ষণ নেই, তবুও কেন যেন তিনি পা চালাতে পারছেন না। কেন? ছেলেটির মাঝে এমন কি ছিল যা বার বার তাঁকে থমকে দিচ্ছে ? ছেলেটির মাঝে কি তিনি তার বাবুটার ছায়া দেখতে পাচ্ছেন? তাঁর সেই বাবুটা, যে পৃথিবীর আলো দেখতে পারল না। নাজমা পারভীনের এখনো মনে পড়ে সেই অচেতনতার অন্ধকার থেকে জেগে ওঠার মুহূর্তটা – যখন ডাক্তার তাকে জানান যে তার বাবুটা এই দুনিয়ায় চোখ খুলতে পারে নি, এরপর শুধু তাঁর স্বামীর অশ্রুসিক্ত চেহারাটা একনজর দেখার পর আবার জ্ঞান হারান তিনি। ডাক্তার নোটিশ দিয়ে দিয়েছেন, সেই সঙ্গে উপরওয়ালাও – তিনি কোন সন্তানের মা হতে পারবেন না। স্কুলের চাকরিটা ছিল বলেই হয়তো তিনি এখনো বেঁচে আছেন। নয়তো তার ভেতরটাতো কবেই মরে গেছে তার বাবুটার সাথেই। স্কুলের ছোট ছোট বাচ্চাদের সাথে খেলা করে মনের কষ্ট ভূলে থাকার চেষ্টা করেন প্রতিনিয়ত। কিন্তু তবুও আজকের অদ্ভুত ছেলেটি আবার তাকে নতুন করে তার বাবুটার কথা মনে করিয়ে দিল। আহা তার ছেলে এরকম একটা ব্যথা পেলে তিনি কতই না আদর করতেন। চোখের পানি মুছে নাজমা পারভীন আরেকবার ছেলেটির দিকে তাকিয়ে তার চলে যাওয়া দেখলেন।
আজ পাঠচক্রে কি বলতে হবে তা শুভাশীষ মনে মনে একবার আউড়ে নিতে চেষ্টা করল। কিন্তু মাথার ভেতর কেন যেন সব তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে, রাস্তার অদ্ভুত ঐ ছেলেটিই কি এর কারণ ? ছেলেটিই কি বারবার তার মাথায় তার আদরের ছোটভাই স্নেহাশীষের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে? স্নেহাশীষের কথা মনে পড়তেই শুভ’এর চোখে জল এল। তার আদরের ছোটভাইটি, তাকে নিয়ে কত স্বপ্ন দেখেছিল সে। বাবা মারা যাবার পর সেই একরকম কোলে পিঠে করে মানুষ করেছে স্নেহ’কে। এস.এস.সি.তে এ+ পাওয়ার পর স্নেহ এসে যখন দাদাকে প্রণাম করেছিল তখন গর্বে শূভাশীষের বুক দশহাত ফুলে গিয়েছিল। ছোটভাইকে নিজের মতো সংস্কৃতিমনা করে তুলতে শুভ তার টিউশনির সব টাকা দিয়ে তাকে বই কিনে দিত, তার গানের গলা মিষ্টি হওয়ায় তাকে একটা গানের স্কুলেও ভর্তি করেছিল। কিন্তু কে জানতো ভেতরে ভেতরে তার প্রিয় ভদ্র ভাইটি খারাপ সঙ্গীদের পাল্লায় পড়ে মরণ নেশার ফাঁদে জড়াবে? তারা যখন টের পেল তখন স্নেহ অনেক দূর এগিয়ে গেছে ফিরে আসার রাস্তাকে বন্ধ করে। এ খবর শুনে মা স্ট্রোক করে মারা গেলেন দুদিনের নোটিশে, স্নেহ মা’কে শেষ দেখা দেখতেও এল না। মাসখানেক পর একবার তার গুন্ডাপান্ডা বন্ধূদের নিয়ে বাসায় এসেছিল, কি তার চেহারার অবস্থা! আর বক তার মুখের ভাষা! শুভ স্তব্ধ হয়ে শুধু দেখেছিল টাকার জন্য তার আদরের ছোটভাইয়ের তান্ডব, মুখ ফুটে কিছু বলতে পারে নি। শেষ পর্যন্ত ঘরের শেষ সম্বলটুকু নিয়ে স্নেহ বেরিয়ে যায়, ওটাই তার সাথে শেষ দেখা। বার তের বছর বয়সে – যখন স্নেহ সুস্থ ছিল, তখন ঠিক এই ছেলেটির মতই মায়াকাড়া চেহারা ছিল। চোখের জল সামলে শূভাশীষ ছেলেটির চলে যাওয়া দেখতে লাগল।
পুলিশ আর ভীড় দেখে ভয়ে মিঠুর পেটের মাঝে সবকিছু তালগোল পাকিয়ে গিয়েছিল, তাই এত সহজে আসা প্রথম সুযোগটা তার হাতছাড়া হয়ে গেল। নিজেকেই জুতা দিয়ে পেটাতে ইচ্ছে করছে এখন, এরকম আরেকটা ভীড় সে কোথায় পাবে। জমিরুল ভাই অবশ্য ভীড় তৈরী করার সিস্টেম শিখিয়ে দিয়েছে, তবে জমিরুল ভাই বলেছিলেন সিস্টেমে গ্যাঞ্জাম হইতেই পারে – কাজেই রেডিমেড ভীড় দেখলে সেইটাই টার্গেট মনে করবি। এতিমখানা থেকে নিয়ে আসার পর থেকে জমির ভাই-ই মিঠুর মা বাপ। তিনিই তাকে সবরকম ট্রেনিং দিয়েছেন আলাদা করে। তাকে বুঝিয়েছেন যে এই দেশটা কিভাবে আল্লাহর নাফরমান বান্দাদের কব্জায় চলে যাচ্ছে। দেশে ইসলামের ঝান্ডাকে আবারো উচু করার জন্য তিনি আর তেনার গ্রুপের লোকজন কিভাবে গোপনে গোপনে দেশে জিহাদ চালানোর ইন্তেজাম করেছে সেটাও সবিস্তারে তাকে বলেছেন এইখানে পাঠানোর আগে। জমির ভাই তাকে বলেছেন যে ইসলামের জন্য মরলে সাথে সাথেই তাকে বেহেশতে এন্ট্রি দেওয়া হবে, আর সেই খানে তার মরা বাপ-মা তার সাথে থাকবে, হয়তো তার ভাইটাও। কাজেই বলা যায় তার পেটের সাথে সুতা দিয়ে বান্ধা ভয়ানক জিনিসটা তার বেহেশতে যাবার টিকেট। সুইচে টিপি দিলেই আবার সে তার মা’র কাছে ফিরে যাবে। আহারে তার মা’টা! কত আদরই না করতো তাকে। সবসময় মুখে ভাত তুলে খাইয়ে দিতো। মা’র চেহারার মাঝেই একটা মায়া মায়া ভাব ছিল, একটু আগে যেই বেটিটা তারে পায়ে ব্যান্ডেজ করে দিল তার মতো। তার বাপটা কথায় কথায় তাকে আচ্ছাসে পিটাতো, বাপেরই বা দোষ কি – মিঠু ছোটবেলায় যে বাঁদরামি করতো! কিন্তু পরে আবার খুব আদরও করতো। বাপটা ভয়ানক রাগী ছিল, ঐ পুলিশ ব্যাটাটার মতোই। তার বড় ভাইটা ছিল খূব ভদ্র আর পড়ালেখায় ভালো, বড় ভাইকে খুব হিংসে হতো তার। কিন্তু কলেরায় যখন তার মা আর ভাইটা মারা গেল তখনই সব শেষ হয়ে গেল। তার বাপটা পাগলের মতো হয়ে গেল – সেই যে একবার বাড়ি থেকে বেরুল আর ফিরে এল না। পরে প্রতিবেশীদের একজন দয়াপরবশ হয়ে মিঠুকে এতিমখানায় ভর্তি করে দিয়ে আসে। আর সেখানেই দেখা হয় জমির ভাইয়ের সাথে। ভাগ্যিস দেখা হয়েছিল, নয়তো কি আবারো সে তার মা বাপ ভাইয়ের সাথে দেখা করবার এরকম সুযোগ পেত? এইসব আকাশপাতাল ভাবতে ভাবতেই আরেকটু হলে ট্রাকের নিচে পড়েছিল। যাক এখন ঠান্ডা মাথায় কাজ শেষ করতে হবে। কিন্তু বেটিটা আর ছ্যামড়াটা বারবার তার দিকে তাকাচ্ছে কেন? ওরা কোন কিছু টের পেল নাকি? ছ্যামড়াটা তাকে ওঠানোর সময় তার পেটের সাথে লাগানো জিনিসটা স্পর্শ করেনিতো? পুলিশটাও দেখি তার দিকে তাকাচ্ছে! নাঃ আর সময় নষ্ট করা চলবে না। জমির ভাইয়ের শেখানো টেকনিকে এখন ভীড় জড়ো করতে হবে। মিঠু পকেট থেকে ছোট ছূরিটা বের করল ... আর শেষবারের মতো মা-বাপ ভাইয়ের চেহারা মনে করার চেষ্টা করল, যাদের সাথে একটু পরে দেখা হবে ... কিন্তু মনে আসছে নাতো! মা’র চেহারার জায়গায় একটু আগের ঐ বেটিটার চেহারা ভেসে আসছে, বাপের ধড়ের ওপর বসানো পুলিশটার মুখ, আর ভাইয়ের চেহারাটা মনে হচ্ছে ঐ ছ্যামড়াটার মতো ... যাকগে, একটু পরেতো দেখা হবেই ওদের সাথে ...
ব্যস্ত শহরের একটি ব্যস্ত রাস্তা। তাতে ছুটে চলছে আরো ব্যস্ত লোকজন। কারো সময় নেই কারো দিকে তাকানোর। মাথার ওপরের চৈত্রের গনগনে রোদ্দুর অফিসগামী মানুষদের মনে করিয়ে দিচ্ছে বসের ঝাঁঝ ধরানো অপমানের কথা। বিশাল অজগরের মতো রাস্তাটিতে মানুষজন আর গাড়িঘোড়া ছুটে চলেছে আপন ছন্দে, স্থির গতিতে।
শুধু ছেলেটি দাঁড়িয়ে আছে ঠিক রাস্তার মাঝখানে।
হঠাৎ ছেলেটি চীৎকার শুরু করল, তার শরীরের সামনের অংশ রক্তে ভেজা। লোকজন ছুটে যেতে লাগল তার দিকে – তাদের সবার আগে রয়েছে সার্জেন্ট মোকাররম, নাজমা পারভীন আর শুভাশীষ।
About author: Fuad Naser
Cress arugula peanut tigernut wattle seed kombu parsnip. Lotus root mung bean arugula tigernut horseradish endive yarrow gourd. Radicchio cress avocado garlic quandong collard greens.
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):