অন্যান্য ভার্সিটিতে কি অবস্থা জানি না, তবে বুয়েটে যারা হলে থেকে পড়াশোনা করছেন তাদের তিনটা লীগের অত্যাচার ভুলে যাওয়ার কথা না। ছাত্রলীগ, প্রিমিয়ার লিগ আর তাবলিগ। ছাত্রলিগ অবশ্য আগে কি করতো জানি না তবে বর্তমানে প্রতিদিন নতুন নতুন যে খেল দেখাচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে ওদের সবগুলারে বাইন্ধা সার্কাস পার্টিতে দিয়ে আসলে ভালো নাম কামাইতে পারতো। এখন অফ সিজন বলে প্রিমিয়ার লিগ নামক মধুর যন্ত্রণাটা নাই। পরীক্ষা চলছে এরকম সময়ে খেলাও
চলছে হয়তো লাল ইবলিস আর গোলন্দাজদের মাঝে। এরকম সময়ে পড়া মিস দিলে পাশ নিয়ে টানাটানি আর খেলা মিস দিলে ইজ্জত নিয়ে, প্লাস গানার সাপোর্টার হিসেবে স্ট্যাটাস এক ধাপ নেমে যাওয়া।
যাহোক এসবের কোনটারই তুলনা হয় না তাবলিগের যন্ত্রণা(তাবলিগের ভাইরা মাফ করে দিয়েন)। তারা খুবই ভালো মানুষ, মিষ্টভাষী এবং সাহায্য করতে তৎপর। ভালো ভালো কথাও বলেন, শুনতে ভালোও লাগে। কিন্তু ঝামেলাটা হলো গিয়া প্রতিদিন একই কথা বলেন, এবং একই কথা বলতেই থাকেন আমাদের মতো পাপীগুলোকে ঠেলে ঠেলে জান্নাতের রাস্তায় নেওয়ার জন্য। কিন্তু ভবীতো ভুলবার নয়, জান্নাতের হুরপরীর থেকে আজকালকার পোলাপানের আবার দুনিয়াবি শান্তিই বেশি প্রিয় হওয়ায় তারা বেশিক্ষণ ধৈর্য্য রাখতে পারে না। তাই প্রতি রোববার যখন আসরের নামায শেষে তারা দুটো ভালো কথা শোনাবার জন্য রুমে রুমে ভিজিট দেয় তখন এক মজার দৃশ্য দেখা যায়। তারা এক সাইডের সিঁড়ির রুম থেকে শুরু করে। যেসব দুর্ভাগারা রোববারের কথা ভুলে গিয়ে দিবানিদ্রার আরামে মগ্ন তারা ধরা খায় আর বেজার মুখে লেকচার শুনে আর ভুল জায়গায় মাথা টাথা নেড়ে বোঝানোর চেষ্টা করে যে তারা সবকিছুই বুঝছে। আর আমার মতো সতর্ক(!) পাবলিকরা রুমে তালা মেরে অজানার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ি - ঐ সময়টাতে কেউ করিডোরে দাঁড়িয়ে থাকলে দেখবেন লাইন দিয়ে পোলাপান রুম তালা দিয়ে ভাগছে। কারো এখনি নাস্তা খাবার খুব দরকার, কারো আবার ঘন্টাখানাকের জন্য বাথরুম চেপেছে, কেউ আবার তার শরীরের মাস খানেকের আবর্জনা দূর করবার মিশন নিয়েছে আজকেউ, সবচেয়ে অলস ব্যক্তিটিও ঐদিন সবার আগে তার ছাত্রের বাসায় পৌছে যায়।
যাহোক হুজুররা যে এসব খেয়াল করেন না তা না, তাই ওনারা কৌশল বদলিয়ে এখন রোববার করে না এসে র্যান্ডম দিনে বার হন শিকার ধরবার জন্য। যেমনটি বেরিয়েছিলেন আজ। আমি আবার পাপী মানুষ হলেও নামায টা ঠিকই পড়ি বলে মসজিদেই তাদের গোপন য়ড়যন্ত্র(!) জেনে যাই। এবং ঘূমে অচেতন অদ্রোহকে রেখেই স্বার্থপরের মতো রণক্ষেত্র থেকে পলায়ন করলাম। ফিরলাম মাগরিবের পর, আফটার ইফেক্টও কেটে যাওয়া উচিত ততক্ষণে। ফিরে দেখলাম সৌমিত্র আর অদ্রোহ দারুণ হাসাহাসি করছে। ঘটনা কি? অদ্রোহের জবানিতেই শুনলাম। ওরা বিধিমতো রুমে ঢুকে আমাকে না পেয়ে বেচারা অদ্রোহের কাঁচা ঘুম ভাঙালেন। যাহোক ওঠার পরই স্বভাবতই অদ্রোহের মেজাজ খারাপ ছিল। এরপর অদ্রোহের সাথে তাদের যে কথোপকথন হল না এরকম:
হুজুরঃ অদ্রোহ ভাই, এই দুনিয়ায় আমরা কত কাজ করি, কত অপরাধ করি। সেসবের কথা চিন্তা করলে কেউই শান্তিতে ঘুমাতে পারতাম না। আমাদের সকল কাজেরই হিসাব দিতে হবে এটা মনে রাখা দরকার।
অদ্রোহঃ(মেজাজ খারাপ করে) তো কি হইছে, হিসাব দিব। আমি অংকে বেশ ভালো। ম্যাথের সব কোর্সে এ পাইছি।
হুজুরঃ(ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে) যাই হোক, ঐ হিসাব দিয়ে তো হবে না। এই হিসাব দেওয়ার জন্য নামাজ কালাম পড়তে হবে। দুনিয়ার হিসাবে চলবে না। চলেন নামাজটা পড়বেন।
অদ্রোহঃ না না, আমার সামনে ম্যাথ পরীক্ষা আছে। পড়াশোনা করতে হবে। আখিরাতে কি হবে জানি না তবে দুনিয়ায় ফুরিয়ার, পিডিই ভালো মতো না পড়লে আরেক টার্ম বুয়েটের মাটি ধন্য করবার সুযোগ হয়ে যাবে সেইটা ভালো মতোই জানি। (বলেই সে বইটই নিয়ে বসে পড়ল মহা পন্ডিতের মতো)
হুজুরঃ (হতাশ স্বরে) ভাই অন্তত আসরের সময়টা বই না পড়ি। এ সময় পড়াশোনা করবার ব্যাপারে নিষেধ আছে।
অদ্রোহঃ বলেন কি? তাহলে আর কি করার যাই উপর থেকে এক শলা বিড়ি টেনে আসি, নাহয় মাগরিবের পড়েই পড়াশোনা করতে বসবো।
বলেই টাশকিত হুজুর আর হাসি চাপার জন্য চেষ্টা করতে থাকা সৌমিত্রকে ফেলে অদ্রোহ পগাড়পার। ঠিক মসজিদের পাশে আমাদের রুম হওয়ায় আমাদের দুর্যোগটা একটু বেশিই। গান বাজাইলেই আবার ওনাদের শরীর চিড়বিড় করে, আবার একটু হাবিজাবি কিছু দেখতে গেলেই আমাদের পর্দা টানাইতে হয়! তাই পুরো দু বছরের ঝাল একদিনে মিটিয়ে ফেলল ফাজিলটা।
আশা করা যায় পরের সপ্তাহে এই পাপী রুমে ওনাদের পদচিহ্ণ পড়বে না আর। ;)
অন্যান্য ভার্সিটিতে কি অবস্থা জানি না, তবে বুয়েটে যারা হলে থেকে পড়াশোনা করছেন তাদের তিনটা লীগের অত্যাচার ভুলে যাওয়ার কথা না। ছাত্রলীগ, প্রিম...
চোরে না শোনে ধর্মের বাণী
About author: Fuad Naser
Cress arugula peanut tigernut wattle seed kombu parsnip. Lotus root mung bean arugula tigernut horseradish endive yarrow gourd. Radicchio cress avocado garlic quandong collard greens.
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):