অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডের ৮৬তম আসরে সেরা চলচ্চিত্রের পুরষ্কার ছিনিয়ে নিল ব্রিটিশ পরিচালক স্টিভ ম্যাককুইনের “12 Years a Slave”। আগ্রহী দর্শক...

দাসত্বের এক যুগঃ টুয়েলভ ইয়ারস আ স্লেইভ

অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডের ৮৬তম আসরে সেরা চলচ্চিত্রের পুরষ্কার ছিনিয়ে নিল ব্রিটিশ পরিচালক স্টিভ ম্যাককুইনের “12 Years a Slave”। আগ্রহী দর্শকেরা যারা এখনো ছবিটি দেখেন নি তাদের জন্য আগে থেকেই সাবধানবাণী - যদি ভায়োলেন্স আপনার সহ্য না হয়, যদি আপনি চলচ্চিত্র থেকে কেবল আনন্দ নিতেই অভ্যস্ত তবে এই চলচ্চিত্র আপনার জন্য নয়। 
 


বিগত কয়েক বছরে আমেরিকায় কালোদের প্রতি অত্যাচার এবং দাসপ্রথা নিয়ে বেশ কিছু ছবি নির্মিত হয়েছে। এর মাঝে টারান্টিনোর “জ্যাঙ্গো আনচেইনড”এর মতো ব্যবসাসফল ছবি এবং টেইট টেইলরের “দা হেল্প”এর মতো সমালোচক নন্দিত ছবিও তালিকায় আছে। কিন্তু পরিচালক স্টিভ ম্যাককুইন উল্লেখিত ছবিগুলোর মতো কালোদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রাম দেখাতে চান নি, অথবা দর্শকপ্রিয় করার জন্য কোন মারদাঙ্গা নায়কেরও আমদানি করেননি। তাঁর পুরো ছবি জুড়ে কেবল অত্যাচার, নৃশংস নির্যাতন আর ভয়াবহতার কলরব। কিছুক্ষণ দেখবার পর আপনার মনে হবে এই চলচ্চিত্রের আবহ সংগীতের একটা অংশই বুঝি চাবুকের শব্দ! কিছু কিছু দৃশ্য এতটাই ভয়ানক এবং অসহনীয় যে আপনি বাধ্য হবেন পর্দা থেকে চোখ সরিয়ে নিতে।

টুয়েলভ ইয়ারস এ স্লেইভের কাহিনী আবর্তিত হয়েছে সলমন নর্দাপ(শিওয়েতেল এইজফর) নামের এক স্বাধীন নিউ ইয়র্ক অধিবাসী কালো নাগরিকের। যে তার কাগজ পত্র খুইয়ে দাস ব্যবসায়ীদের হাতে পড়ে এক মালিক থেকে আরেক মালিকের হাতে ঘুরে বেড়ানোর মাঝে। এর মাঝে কেউ কেউ হয়তো মাস্টার ফোর্ডের(বেনেডিক্ট কাম্বারবাচ) মতো খানিকতা সংবেদনশীল কিন্তু বেশীরভাগই এডুইন এপসের(মাইকেল ফাসবাইন্ডার) মতো নিষ্ঠুর এবং বিবেকবোধশূণ্য।

ম্যাককুইন নিয়মিতই এমন সব বিষয় বা সামাজক সমস্যা তাঁর চলচ্চিত্রে তুলে ধরতে চেয়েছেন যা সাধারণত মানুষ এড়িয়ে যেতে চায়। তাঁর প্রথম ছবি “Hunger” এর কাহিনী ছিল একদল কয়েদীদের অনশন আন্দোলনের ঘটনা নিয়ে। তাঁর আরেকটি সমালোচিত ছবি “Shame” এর কাহিনী ছিল সেক্স অ্যাডিকশন নিয়ে। কাজেই তিনি যে আমেরিকার দাসপ্রথার কালো অধ্যায়ের স্পর্শকাতর দিকগুলো আরো বেশি জান্তব এবং আরো বাস্তবরূপে ফুটিয়ে তুলবেন তা বলাই বাহুল্য। অস্কারজয়ী সঙ্গীত পরিচালক হাস্ন জিমারম্যানের আবহসংগীত ছবির পটভুমিকে দিয়েছে অন্যমাত্রা।

নির্যাতন আর নিষ্ঠুরতার দৃশ্যে যখন আপনি চোখ সরিয়ে নিতে চাইবেন, বাকি ছবিটা দেখার মানসিক শক্তি যখন অবশিষ্ট থাকবে না তখন আপনাকে প্রেরনা যোগাবে এইজফরের অভিনয়। নাইজেরিয়ান বংশোদ্ভুত এই ব্রিটিশ অভিনেতার উপস্থিতি পুরো চলচ্চিত্রের আবহকে বদলে দিয়েছে। তাঁর বলা এবং না-বলা সংলাপগুলো মিলিয়ে যে পারফর্মেন্স দেখিয়েছেন রূপালী পর্দায় তাতে কেবলমাত্র ডালাস বায়ার্স ক্লাবের অসাধারণ অভিনয়ের মাধ্যমেই অস্কারটা ছিনিয়ে নিতে পেরেছেন ম্যাথিউ ম্যাককনাহি। এডুইন এপসের বিকৃত যৌনরূচির শিকার প্যাটসির চরিত্রে অনবদ্য অভিনয় করে অস্কার জিতে নিয়েছেন লিওটা নিয়ং। আর সেই সাথে পল জিয়ামেত্তি, বেনেডিক্ট কাম্বারবাচ, মাইকেল ফাসবাইন্ডারের মতো জাত অভিনেতারা নিজেদের জাত চেনাতে ভুল করেননি। সেই সাথে শেষের দিকে এই ছবির প্রযোজক ব্রাড পিটের একটি ক্যামিও আবির্ভাব এবং একটি মনোলগও ছিল চমৎকার।

ঐ সময়ের এক অতিমাত্রায় বাস্তব এবং ভয়ানক উপাখ্যান ম্যাককুইনের টুয়েলভ ইয়ারস এ স্লেইভ। তবে মনে রাখতে হবে এই ছবির মূল চরিত্র জ্যাঙ্গোর মতো কোন মহানায়ক নয়, যে ভয়াবয় অত্যাচার থেকে সবাইকে মুক্তি দিয়ে সুখের সংসার করবে। এই ছবির অন্য সকল কালো চরিত্রের মতো সেও নির্যাতনের শিকার একজন সাধারণ মানুষ, আর এটাই বাস্তব।

0 মন্তব্য(গুলি):